বিয়ে এবং ধর্মীয়ভাবে বিয়ের নিয়ম

বিয়ে মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিয়ের মাধ্যেমেই একজন নর এবং একজন নারী পূর্ণতা লাভ করে। বিয়ে নারীদের জন্য একটি স্বপ্ন আর পুরুষদের জন্য একটি দায়িত্ব।

বিয়ে হলো সেই রীতিনীতি বা প্রথা বা চুক্তি, যার মধ্য দিয়ে সমাজ একজন পুরুষকে একজন নারীর সাথে অতি ঘনিষ্টভাবে বসবাস, সুখ-দু:খ ও হাসি-কান্না, দৈহিক চাহিদা ভাগাভাগি করে নিতে দেয় এবং সন্তানদের উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে এক মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যার কারণে তারা একই ছাদের নিচে জীবনের বাকী সময়টা পার করে দিতে পারে।

ইসলামে বিয়ে করতে হলে প্রথম যেই বিধানটি মানতে হয় তা হলো, পাত্রী কে অবশ্যই আল্লাহর প্রতি  বিশ্বাসী এবং ইসলামের অনুসারী হতে হবে। অন্য কোন উপসনায় বিশ্বাসীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ইসলামে হারাম করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সূরা নিসার ২২ থেকে ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা মূর্তি পূজক এবং শীরককারী তাদের বিয়ে করা হারাম।”

একজন মুসলিম পুরুষ ইহুদী বা খ্রিষ্টান মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন, তবে একজন ইহুদী বা খ্রিষ্টান পুরুষকে একজন মুসলিম মেয়ের বিয়ে করা হারাম । এই জন্য সূরা বাকারার ২২১ নং আয়াত লক্ষ্যণীয়। আয়াতে বলা হয়েছে

‘’আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’’

কিছু কিছু ইসলামী চিন্তাবীদের মতে (তাওহীদ বাদী আহলে কিতাব), ইহুদী বা খ্রিষ্টান মেয়েদের বিয়ে করা যাবে, যখন মুসলিম নারীদের অভাব হবে।

ইসলামে বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী কেমন হবে, সে বিষয়ে উল্লেখ আছে সূরা নূরের ২৬ নং আয়াতে । আল্লাহ্ পাকের সকল নবীগণ বিয়েকে সুন্নাত বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিভিন্ন সমাজ গোত্রে আরো এক ধরনের বিয়ে রয়েছে, যে বিয়েকে অসহায় বা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ বলা হয়। নবী করীম হুজুরে পাক (সঃ) এই বিয়েকে কেয়ামত অবধি নিষিদ্ধ করেছেন।

ইসলামের রীতিতে পাত্র, পাত্রী/উকিল, উভয়পক্ষের লোক উপস্থিত থাকে।বিয়েতে পাত্র-পাত্রী উভয়েরই মতামত নেয়া হয়।  কাজী দোয়া ও সূরা পাঠ করে বিয়ে সম্পন্ন করেন এবং উভয়ই বিয়েতে রাজী থাকলে কবুল বলার মাধ্যমে তাদের স্বীকৃতি জানায়। এরপর কাবিন নামায় দস্তখত করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর অভিভাবকগণ বর এবং কনেকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে বরের হাতে তুলে দেন এবং বর কনেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।  ইসলামে আল্লাহ্ সুবানুতাআলা মেয়েদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করেছেন- ইসলামে কোনো মেয়েকে বিয়ে করলে দেনমোহর দেওয়া আবশ্যক- যা ছেলের ক্ষমতা এবং মেয়ের দাবীর উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।

সূরা নিসার ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে – “তোমরা তোমাদের স্ত্রী’র মোহরানা দিয়ে দাও।”

বিয়ের আগে মনে মনে যদি কারও দেনমোহর না দেওয়ার ইচ্ছা থাকে বা কেউ যদি দেনমোহর না দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে নিজ স্ত্রীকে ছোঁয়াও তার জন্য জায়েয নয়। দেনমোহর হলো একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার স্থাপন ও ইজ্জতের হাদিয়া এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার হাতিয়ার, যখন আপনি থাকবেন না।

তবে আমাদের সমাজে বিয়েতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা ঢুকে গিয়েছে যা ইসলাম বৈধতা দেয় না। গায়ে হলুদ ও বৌভাত সে রকম কিছু আনুষ্ঠানিকতা। তবে ওয়ালিমা বা বিয়ের পর ছেলের বাড়ীতে খাওয়ার আয়োজন করা ইসলামী সুন্নাত।

আমাদের সব সময় খেয়াল রাখা উচিত যেন, বিয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানাদিতে যেন আমরা ইসলাম ও তার শরীয়ত তথা বিধি-বিধান যেন মেনে চলতে পারি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.